ঢাকা , শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫ , ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রাজধানীতে গরুর হাটে সরবরাহ কম, ক্রেতাও কম প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে উজবেকিস্তান ও জর্ডান সীমান্তে পুশ ইন ও কোরবানির চামড়া পাচার রোধে কঠোর অবস্থানে বিজিবি আজ জামারায় শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা সদরঘাটে ছুটছে মানুষ, ছাড়ছে লঞ্চ পুটি-কাতলা-রুই, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঈদুল আজহার আগের রাতে লেবাননে হামলা ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভিসা দেয়া স্থগিত করেছে আফ্রিকার দেশ চাদ ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে: ডিএমপি কমিশনার আখাউড়ায় দেবে গেলো সেতু মহাসড়কে যানজটের কারণ জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ আজ অনুশীলন নেই, রোজা রাখছেন হামজা মুক্তির আগেই রেকর্ড ভাঙছে হাউজফুল ৫ এমি মার্তিনেজের দলবদলের গুঞ্জনে নতুন মোড় মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে সরকারি আদেশ জারি ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান চেয়ে পুতিনকে ফোনকল পোপের ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার যানজট চন্দ্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানবাহনের ধীরগতি গতবারের মতো ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা সম্ভব হচ্ছে না: আইজিপি

১৭ বছর পরও জমিনে জীবনে সিডরের ক্ষত

  • আপলোড সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০২:৩৪:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০২:৩৪:৪৪ অপরাহ্ন
১৭ বছর পরও জমিনে জীবনে সিডরের ক্ষত
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সেদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। তীব্র ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস পুরো উপকূল বিশেষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উপকূলের জেলাগুলো লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, পশুপাখি আর অসংখ্য মানুষ। আজ সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ১৭ বছর পূর্তি। আজও সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী। এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় সেই ভয়াল সিডরের ভয়। যাদের সিডর প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের অনেকেই সাগরে লঘুচাপ হলেই ভীত হয়ে ওঠেন।এর কারণ অবশ্য, সিডর-পরবর্তী সময়ে উঁচু শক্ত বেড়িবাঁধের দাবি উঠলেও সেই দাবি পূরণ হয়নি আজও। প্রতিনিয়ত ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, ভেসে যাচ্ছে মাছের ঘের।সরকারি তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলার ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ নিহত হয়েছিল। নিখোঁজ হয়েছিল আরও ১৫৬ জন; যাদের খোঁজ আজও মেলেনি। এ ছাড়া ৩০ হাজার ৪৯৯টি গবাদি পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯টি হাঁস-মুরগি মারা যায়। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ পরিবারের সবাই কমবেশি ক্ষতির শিকার হয়। সম্পূর্ণভাবে গৃহহীন হয়ে পড়ে জেলার ৭৭ হাজার ৭৫৪টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব মানুষের জীবন এখনো পুরো স্বাভাবিক হয়নি।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, বরগুনাসহ সিডর বিধ্বস্ত উপকূলীয় জনপদে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হলেও তার অধিকাংশ চলে গেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এনজিওর পকেটে। তাই সিডর বিধ্বস্ত এই জনপদের মানুষের মধ্যে ত্রাণ কিংবা ঋণ বিতরণ করা হলেও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত বরগুনায় নেই কোনো আবহাওয়া অফিস।পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৫ মিটার, আমতলীতে ১২০ মিটার, তালতলীতে ৫৪০ মিটার, পাথরঘাটায় ৫৮৫ মিটার, বামনা উপজেলার ৩৪০ মিটার, বেতাগীতে ১৯০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাস হলে জেলার অধিকাংশ বেড়িবাঁধই প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নাম নলটোনা। যেখানে সিডরের এক বছর আগে থেকেই বেড়িবাঁধ ছিল না। সিডরের সময় সেখানে ২০ ফুটের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। সিডরের তাণ্ডব থামার পরের দিনই সেখানে অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনও এলাকাটি পানির নিচে হাবুডুবু খাচ্ছিল। লাশ দাফনের জন্য কোনো স্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। লাশগুলো নিয়ে আসা হয় বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। দাফনের কাপড় ছাড়াই ২৯ জনকে ১৯টি কবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়।মাঝের চরের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, আমাদের এই চরটি অর্ধেক বরগুনা আর অর্ধেক পাথরঘাটায় অবস্থিত হওয়ায় কোনো উপজেলা থেকেই তেমন কোনো বরাদ্ধ দেওয়া হয় না। সিডরের পর থেকে নানা দুর্যোগে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে স্বাভাবিক জোয়ারেই আমাদের চর প্লাবিত হয়। বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস এলে তো কথাই নেই।সদর উপজেলার ফুলঝুরি গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্র্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণে টনক নড়ে। ঝড় থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা হয় এ কারণে বাঁধের স্থায়িত্ব থাকে না।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, বরগুনার নদীতীরবর্তী মানুষের নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও জোয়ার জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এখানকার বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে যে এলাকাগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেখানকার স্থানীয়দের কীভাবে সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়েও কাজ চলমান রয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সিডর বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এর ক্ষতিও অপূরণীয়। সিডর-পরবর্তী সময়ে সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন দুর্যোগের হাত থেকে বরগুনাবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রচুর সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় এখন আগের থেকে অনেক বেশি সক্ষম ও সচেতন আমরা।

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

রাজধানীতে গরুর হাটে সরবরাহ কম, ক্রেতাও কম

রাজধানীতে গরুর হাটে সরবরাহ কম, ক্রেতাও কম